28 Apr 2024, 11:51 pm

জিহাদ শাহাদত ও দেশত্যাগ সম্পর্কে হাদীসে কুদসীসমূহ (বাংলা অর্থ)

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জিহাদ শব্দের অর্থ হলো, যে কোন ভাল কাজ সমাধান করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা , সাধনা করা এবং সংগ্রাম করা। পারিভাষিক অর্থ আল­াহ্র কলেমা বুলন্দ করার জন্য অর্থাৎ আল­াহ্র দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাতœক চেষ্টাÑসাধনা করা। এর চূড়ান্ত পর্যায় হলো , মরণপণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধ। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্র রক্ষার্থে জিহাত করা ফরয। স্বরাজ্যে বিস্তার, পররাজ্য অপহরণ অথবা গায়ের জোরে ওপরের উপর নিজের ধর্ম চাপানোর জন্য জিহাদ করা নাজায়েয।
জিহাদের মুল্য বর্ণনাতীত। যারা আল­াহ্র পথে দৈহিক ও মানসিক সংগ্রামে আতœনিয়োগ করে, করুণাময় আল­াহ্ তাদের যাবতীয় পাপরাশি ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাতবাসী করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। মুজাহিদগণকে যুদ্ধের সাজÑসরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা সাহায্য করা কিংবা তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পরিবারবর্গের তত্বাবধান করাও জিহাদের অন্তর্ভুক্ত । আল­াহ্র পথে সংগ্রাম করে যারা মৃত্যুমুথে পতিত হয় , সে শহীদগণকে করুণাময় আল­াহ্ তাঁর আরশের নিচে প্রতিদান স্বরূপ একটি বিশেষ স্থান দান করবেন।

১। মহান ও পরাক্রমশীল আল­াহ্ বলেছেন ,“আামার বান্দাদের মধ্যে যে বান্দা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমার পথে জিহাদকারীকেরূপে ঘর থেকে বের হয়, তাকে যদি ফিরিয়ে আনি, তবে তাকে পুরস্কার ও গনীমতের মালাসহ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমিই গ্রহণ করি, আর যদি তাার মৃত্যু ঘটাই, তবে তাকে ক্ষমা করবার, তার প্রতি রহম করবার এবং তাকে জান্নাত প্রবেশ করানোর দায়িত্বও আমার।” আহমদ ও নাসায়ী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল­াহ ইবনে উমর (রা) থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।
(নবী করীম সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, “যখন তোমাদের ভাইগণ ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হলো তখন আল­াহ্ তাদের আতœাগুলোকে সবুজ বর্ণের কতকগুলো পাখির ভেতরে স্থাপন করলেন। সেসব পাখি অতঃপর জান্নাতের ঝর্ণাসমূহে নামতে থাকে ও জান্নাতের ফল ভক্ষণ করতে থাকে। আর যে সকল স্বর্ন নির্মিত দীপাধার আরশের নিচে ঝুলানো রয়েছে, তাতে তারা অশ্রয় গ্রহণ করতে থাকে । অতঃপর যখন এ আতœা তাদের শ্রেষ্ঠতম খাবার , পানীয় ও বিশ্রামের সুযোগ পেল, তখন তারা বলল,“ এমন কেউ আছে কি যে দুনিয়াতে আমাদের ভাইদের নিকট সংবাদ পৌছায় যে, আমরা জান্নাতে জীবন যাপন করতেছি এবং এখানে আমাদেরকে জীবিকা দান করা হচ্ছে, যাতে তারা জিহাদে কখনও শিথিলতা প্রকাশ না করে?” অতঃপর আল­াহ্ বললেন,“আমি তাদের নিকট তোমাদের পক্ষ থেকে এ বার্তা পৌছাব।” ইমাম আহমদ ও আবূ দাউদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল­াহ ইবনে আব্বাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।)

২। মহান আল­াহ্ বলেন, “আমার রাস্তায় জিহাদকারীর কথা বলতে গেলে, সে আমার জামানতের ভেতর আছে। যদি আমি তার প্রাণ হরণ করি, তবে তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী করি, আর যদি তাকে ফিরিয়ে আনি তবে তাকে পুরস্কার ও গনীমতের মালসহ ফিরিয়ে আনি।” ইমাম তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৩। নিশ্চয়ই শাহাদাতবরণকারী আতœাগুলোকে সবুজ বর্ণের পাখির অন্তরে রূপান্তর করা হয়: তারা জান্নােেতর বাগানসমূহ বেড়াতে থাকে। এবং অল­াহ্র আরশ থেকে নিচের দিকে ঝুলন্ত দীপাধারগুলো হয় তাদের আবাসস্থল। মহান ও মর্যাদাবান আল­াহ্ বলেন, “ তোমরা কি তা অপেক্ষা বেশি সম্মান ও মর্যাদা সম্বন্ধে জান যদ্বারা আমি তোমাদেরকে সম্মানিত করেছি?” তারা বলবে, “না” তবে আমরা এই কামনা করি যে, আপনি পুনরায় আমাদের আতœাগুলোকে আমাদের দেহে ফিরিয়ে দেবেন, যেন আমরা পুনরায় জিহাদ করতে পারি এবং আপনার রাস্তায় শহীদ হতে পারি।” হাম্মাদ আলোচ্য হাদীসখানা আবূ সাঈদ (রা)Ñ এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪। শাহাদাতবরণকারী আতœাগুলোকে সবুজ বর্ণের পাখিদের অন্তরে অবস্থান করে, তাদের জন্য আল­াহ্র আরশ থেকে কতকগুলি দীপাধার প্রদত্ত রয়েছে। তারা বেহেশতের অভ্যন্তরে যেখানে ইচ্ছা ভ্রমন করে। তারপর দীপাধারগুলো নিকটে স্থান গ্রহণ করে আরাম করে। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেন,“তোমরা কি আর কিছু কামনা কর?” তখন তারা উত্তর দেয়,“ আমরা আর কি বস্তু কামনা করব? আমরা বেহেশতের যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াই।” অতঃপর তিনবার আল­াহ্ এ প্রশ্ন করবেন। তারপর যখন তারা দেখবে যে, তাদেরকে এ প্রশ্ন বারবার করা হয়েছে, তখন তারা বলবে, “ হে প্রতিপালক! আমরা এ বাসনা করি যে, আপনি আমাদের দেহে আতœাগুলি পুনরায় ফিরিয়ে দিন।, যেন আমরা দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় আপনার পথে শহীদ হতে পারি।” অতঃপর আল­াহ্ যখন দেখবেন যে (প্রকৃতপক্ষে) তাদের কোন প্রয়োজন নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দিবেন। ইমাম আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুল­াহ ইবনে মাসউদ (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৫। মহান ও পরাক্রমশীল আল­াহ্ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার ঘরে আগমন করে অথবা আমার রাসূলের ঘরে আগমন করে অথবা বায়তুল মুকাদ্দসে আগমন করে আমার যিয়ারত করেছে, তারপর মৃত্যুবরণ করেেেছ, সে শহীদরূপে নিহত হয়েছে।” হযরত দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৬। ধর্ম যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী আল­াহ্র “আরশের ছায়ায় নিচে ইয়াকুতের তৈরি মিম্বারের উপর অবস্থান করবে যা মৃগানাভীর স্তম্ভের উপরে বসানো হবে। সেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে বলবেন, “আমি কি তোমাদের সঙ্গে আমার ওয়াদা পূর্ণ করিনি এবং তা তোমাদের জন্য সত্যে পরিণত করিনি, তখন তারা বলবে, “হ্যাঁ আমাদের প্রতিপালকের কসম! তুমি প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছ।” উকায়লী আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

৭। বেহেশতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী দল দরিদ্র মুজাহিদগণ, যাদের দেহে তাদের বিপদের নির্দেশসমূহ লেগে থাকবে। তাদেরকে কোন আদেশ করা হলে, তারা তা শ্রবণ করত ও পালন করত। আর তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির কোন কিছুর দরকার থাকলে আর সে প্রয়োজন পূর্ণ না হওয়া অবস্থায়ই তার মৃত্যু হলে মহান ও মর্যাদাশীল আল­াহ্ শেষ বিচারের দিন বেহেশতকে আহব্বান করবেন এবং বলবেন, “আমার সে বান্দাগণ কোথায়, যারা আমার পথে সংগ্রাম করেছিল, আমার পথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং আমার পথে জিহাদ করেছিল বিনা শাস্তিতে ও বিনা হিসাবে তোমরা বেহেশতে প্রবেশ কর।” আর ফেরেশতাগণ আসবে, সিজদা করবে এবং বলবে!” হে আমাদের প্রভু আমরা দিন রাত তোমার পবিত্রতা  বর্ণনা করি। তারা কে যে তুমি তাদেরকে আমাদের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করেছ?” তখন মহান ও মর্যাদাবান আল­াহ্ বলবেন, “তারা আমার সে বান্দা , যারা আমার পথে সংগ্রাম করেছিল এবং আমার পথে আহত (আঘাতপ্রাপ্ত) হয়েছিল।” তখন ফেরেশতাগণ সকল দরজা থেকে তাদের দিকে বের হয়ে আসবে এবং বলবে , “তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে তার পরিবর্তে তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর অখিরাতের আবাসস্থল কতই না উত্তম !” তিবরাণী আলোচ্য হাদীখানা  আব্দুল­াহ ইবনে উমর (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[গরীব মুজাহিদগণ হলেন ইসলামের প্রথম যুগের গরীব মুসলমানগণÑ যারা মক্কার কাফিরদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করে মাদীনায় হিজরত করেছিলেন।]

৮। নবী করীম সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, “সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশকারী দল দরিদ্র মুজাহিদগণ, যাদের দেহে বিপদের নির্দেশন লেগে থাকবে। তাদের যখন যা আদেশ করা হত, তরা তা শ্রবণ করত এবং পালন করত। রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট তাদের কোন প্রয়োজন থাকলে তা বুকের মধ্যে নিয়েই সে মৃত্যু বরণ করত। অর্থাৎ তা অপূর্ণ থেকে যেত অতঃপর মহামহিম আল­াহ্ নিজের ইচ্ছা অনুযাযী যে কোন একদল ফেরেশতাকে বলবেন , “তোমরা তাদের নিকট যাও এবং তাদেরকে সালাম জানাও।” তখন ফেরেশতাগণ বলবে, “আমরা আপনার আসমানী জগতের অধিবাসী এবং আপনার সৃষ্টিকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। আপনি কি আমাদের নির্দেশ দিতেছেন, আমরা অমুক ব্যক্তিবর্গের নিকট যাব এবং সালাম করব?” আল­াহ্ বলবেন, “তারা এমন বান্দা , যারা আমার ইবাদত করেছে এবং আমার সাথে কোন কিছু অংশী স্থ্াপন করেনি। তাদের দ্বারা সীমান্ত রক্ষা করা হত, তাদের কষ্ট সব সময় থেকে যেত এবং তাদের কোন ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করত যে, তার প্রয়োজন অপূর্ণ থেকে যেত। তা পূর্ণ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না।” অতএব, ফেরেশতারা তাদের নিকট আগমন  করে এবং প্রতিটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করে আর বলে,“তোমরা যে পরম ধৈর্য সহকারে কাজ করেছ এজন্য তোমাদের ওপর অবিরত শান্তি বর্ষিত হোক। পরকালের ঘর কতই না উত্তম!” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীখানা  আব্দুল­াহ ইবনে উমর (রা) Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4015
  • Total Visits: 675930
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1122

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
  • ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:৫১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
2930     
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018